বিতর্কিত নাগোর্নো-কারাবাখ এলাকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিটের মাথায় আজারবাইজান তা লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে আর্মেনিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার মাত্র চার মিনিটের মাথায় আর্টিলারি শেল ও রকেট ছুড়ে তা লঙ্ঘন করে আজারবাইজান। তবে অভিযোগের বিষয়ে এখনো কোন মন্তব্য করেনি আজারবাইজান।
আজ রোববার বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার মধ্যরাতে ওই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে সমঝোতা হয়েছিল। গত সপ্তাহান্তে কয়েকটি চুক্তিতে সম্মতি আসার কারণে যুদ্ধবিরতি চুক্তিটিও স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তবে এরপরও সংঘর্ষ চলেছে।
গত মাসে এমন একটি এলাকা নিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল যা আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ বলে স্বীকৃতি থাকলেও জাতিগত আর্মেনীয়রা এটি পরিচালনা করে। এই সংঘাতে কয়েকশ মানুষ নিহত হয়। ওই এলাকায় ১৯৯৪ সালে একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ছয় বছরের সংঘাতের অবসান হওয়ার পর এটি সবচেয়ে ভয়াবহ নৃশংসতা।
এর আগে শনিবার দুই দেশই রুশ-মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আনে। এই বিবৃতির পর এমন সন্দেহ আরও স্থায়ী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক চুক্তি কী?
দুই দেশই মানবিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়, যদিও এ বিষয়ে তেমন বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। আজারবাইজানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্টদের দেওয়া বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাগোর্নো-কারাবাখ সংঘাতে মধ্যস্থতা করার জন্য ওই তিন দেশের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে ওএসসিই মিনস্ক গ্রুপ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়।
আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আন্না নাঘদালিয়ান এক টুইট বার্তায়ও একই বিবৃতি তুলে ধরে বলেন, দেশটি যুদ্ধাঞ্চলে যুদ্ধবিরতি এবং উত্তেজনা প্রশমনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ যিনি এর আগের সপ্তাহে হওয়া চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিলেন তিনি দুই দেশেরই পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাদেরকে বলেছেন যে দুই দেশেরই আগের চুক্তিটির শর্ত কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত।
যুদ্ধক্ষেত্রে কী হচ্ছে?
আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শুশান স্টিপানিয়ান টুইটারে লিখেছেন, শত্রুপক্ষ স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১২টা ৪ মিনিটে উত্তর দিকে আর্টিলারি শেল নিক্ষেপ করে এবং রাত ২টা ২০ মিনিট থেকে ২টা ৪৫ মিনিটের সময় দক্ষিণ দিকে রকেট নিক্ষেপ করে।
আজারবাইজান অভিযোগ করে যে, আর্মেনিয়া শনিবার সকালে গানজা শহরে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে যাতে ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৫ জন আহত হয়। গানজা শহরটি যুদ্ধাঞ্চল থেকে দূরে বলেও জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, আর্মেনিয়া স্বেচ্ছায় এবং নির্বিচারে বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করছে। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আর্মেনিয়া পাল্টা অভিযোগে বলেছে যে আজারবাইজানই মূলত বেসামরিক এলাকায় হামলা করছে।
স্টিপানিয়ান ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি দাবি করেছেন যে, নাগোর্নো-কারাবাখ এলাকায় ধ্বংস্তুপ দেখা যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী নাগোর্নো-কারাবাখের রাজধানী স্টিপানাকার্টসহ বেসামরিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে।