জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রব্বানি হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি সাময়িক বরখাস্ত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম ওরফে বাবুর এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার গভীর রাতে উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের মধ্য ধাতুয়াকান্দা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামি মো. নয়ন মিয়া (২৪)। তিনি মধ্য ধাতুয়াকান্দা এলাকার বাসিন্দা। চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমের সহযোগী ছিলেন নয়ন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।
বকশীগঞ্জ থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিক গোলাম রব্বানির ওপর হামলার ঘটনায় সরাসরি অংশ নিয়ে ছিলেন মো. নয়ন মিয়া। ঘটনার পরই এলাকা থেকে নয়ন পালিয়ে যান। বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হওয়া ১৩ জন আসামিকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসব আসামি হত্যাকাণ্ডে নয়নের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন। তাঁদের জবানবন্দির ভিত্তিতে নয়নকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছিল। গোপন সংবাদের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে, নয়ন এলাকায় রয়েছেন। পরে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, রিমান্ডে থাকা দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে নয়নের নাম পাওয়া যায়। কিন্তু ঘটনার পর থেকে নয়ন ঢাকায় পালিয়ে ছিলেন। ঈদের মধ্যে এলাকায় আসেন এবং এক প্রতিবেশীর ঘরে ওঠেন। ঘরটি বাইরে থেকে তালা লাগানো ছিল। ভেতরে নয়ন অবস্থান করছিলেন। অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে নয়নকে হস্তান্তর করা হবে। তাঁকে আজ আদালতে পাঠানোর কথা রয়েছে।
রব্বানির ওপর হামলার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ প্রথমে নয়জনকে আটক করে। মামলা হওয়ার আগে ১৭ জুন সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থেকে প্রধান আসামি মাহমুদুল আলমসহ তিনজনকে আটক করে র্যাব। ওই দিন বিকেলে বগুড়া থেকে আরও একজনকে র্যাব আটক করে। সব মিলিয়ে প্রধান আসামিসহ ১৩ জনকে আটক করা হয়। তাঁদের সবাইকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে সব আসামির বিরুদ্ধে রিমান্ড চেয়ে পুলিশ ১৭ ও ১৮ জুন আদালতে পাঠায়। ১৮ জুন আদালত তাঁদের সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে পাঠান। ২২ জুন রিমান্ড শেষে আসামিদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে রেজাউল করিম ও মো. মনিরুজ্জামান ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন। এর এক দিন পর রিমান্ড শেষে হত্যার দায় স্বীকার করে প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন। গতকাল রাতে আরও একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে আলোচিত হত্যা মামলাটিতে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
গত ১৪ জুন রাত ১০টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সাংবাদিক গোলাম রব্বানি। এ সময় তাঁকে টেনেহিঁচড়ে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি ও বেদম মারধর করা হয়। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে হামলাকারীরা তাঁকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরের দিন দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।