প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি সব সময় জনগণের খাদ্য ও ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছি। কখনো ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাই না।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সম্পূর্ণ স্বাধীন হওয়ায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচনে জনগণ ভোট দিলে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সেলর ডেরেক শোলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বুধবার গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো সংসদে ইসির পুনর্গঠন আইন পাশ হয় এবং তারপর সেই আইনের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন হয়। ইসি সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন এবং এর প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা রয়েছে।
সামাজিক অর্থনৈতিক বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের উন্নয়নের বিষয়ে আলোকপাত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সময়ে গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের এই পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়েছে। দেশে অব্যাহত গণতান্ত্রিক চর্চা ও স্থিতিশীলতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
আলোচনায় রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ ও রোহিঙ্গা ইস্যুও স্থান পায়। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের উচিত এই যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া। কারণ এর ফলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ কখনোই মানবজাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।’
যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। আলোচনার মাধ্যমে বিরোধের মীমাংসা হতে পারে।’
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা হিসাবে দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয়রা এখন সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা পাঁচ বছর ধরে কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে আছে। তাদের কারণে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থানীয়দের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মাদক পাচার, মানব পাচার, সন্ত্রাসবাদ ও আন্তঃসহিংসতার মতো নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাই তাদের রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই।’
মানবিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় ডেরেক শোলে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাস্তুচ্যুত এই জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। মিয়ানমারে আবার গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলে প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কিছু উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তার সফর দুদেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বের প্রতিফলন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ. রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস উপস্থিত ছিলেন। শোলে ২৪ ঘণ্টার সফরে মঙ্গলবার বাংলাদেশে পৌঁছেন।