• মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:২১ অপরাহ্ন

মানবজীবনে সাহিত্যের প্রভাব

Reporter Name
Update : বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

মানুষের চিন্তা, ভাব, আবেগ, অনুভূতি, কল্পনা- এ সবই সাহিত্যের উপজীব্য। এগুলোকে সামনে রেখে মানুষ এগিয়ে যায় প্রগতির পথে। সমাজ পরিবর্তনশীল। সমাজের সর্বত্র প্রতিনিয়ত রদবদল হচ্ছে।

ফলে মানুষের জীবনাচরণেও সেই ধরনের পাল্টা হাওয়া লক্ষণীয়। সাহিত্যের ভূমিকা শুধু অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভবিষ্যৎ পৃথিবী কেমন চাই তারও একটি ইশারা দেয় সাহিত্য।

সাহিত্যচর্চার ফলে মানুষের জৈবিক ও আত্মিক- এ দুই সত্তারই উৎকর্ষ সাধন হয়। সাহিত্য ব্যক্তিকে মার্জিত করে তোলে এবং আবেগ, অনুভূতি ও মূল্যবোধকে জীবনের সামগ্রী করে নেয়ার প্রেরণা জোগায়। সুন্দর মনের সুন্দর মানুষ ছাড়া সাহিত্যচর্চা কোনোদিনই সফল হতে পারে না।

মনকে সুন্দর ও সজীব করে তোলে সাহিত্য। সাহিত্য মানে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা, জীবনে জীবন যোগ করা। এই চেতনাই সমাজের উন্নয়নের মূল বিষয়। কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, বিচারহীনতা- এসব সাহিত্য ও সংস্কৃতির পরম শত্রু এবং সমাজ-প্রগতির প্রবল বাধা।

মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ, কথা ও কাজের মিল, পোশাক-পরিচ্ছদ, ব্যবহার, বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা- এগুলোও সাহিত্যের অংশ। বাহ্যিক অবয়ব কখনও মানুষের যথার্থ পরিচয় বহন করে না। মানুষের মনুষ্যত্বই প্রধান।

সাহিত্য সত্য, সুন্দর, আনন্দময় অনুভূতিতে পাঠক হৃদয়কে জাগিয়ে তোলে। হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিও পেতে পারে মহৎ জীবনের আভাস। পাষাণবৎ মানুষও নতুন করে খুঁজে পায় মনুষ্যত্ব। কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশে সাহিত্যপাঠ হতে পারে একটি কৌশল।

জীবনকে সৃজনশীল ও ক্রিয়াশীল রাখতে সাহিত্যের সান্নিধ্য আবশ্যক। সাহিত্য মানবমনের চিরকালের মুক্তির সরোবর। সাহিত্য পাঠের চেয়ে মহৎ আনন্দ আর নেই।

একনিষ্ঠ পাঠকের পক্ষেই কেবল এ আনন্দ লাভ করা সম্ভব। সাহিত্যপাঠের মাধ্যমে আমরা লাভ করি জগৎ ও জীবনের উপলব্ধি। সেই সঙ্গে আমরা উপলব্ধি করি নিজেকে। আমাদের অন্তরের ‘আমি’ কে তা জানার প্রশ্ন আসে মন থেকে। সাহিত্যপাঠের মতো নির্মল ও পবিত্র আনন্দ আর নেই।

জীবন প্রত্যক্ষ ও কঠিন বাস্তব। তাই সাহিত্য ও শিল্পকে বাস্তবধর্মী না হয়ে উপায় নেই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী চরণটি উল্লেখ করতে হয়- ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম।’

আবার সাহিত্য ও সমাজ বিনির্মাণকারীদের আকাশকুসুম কল্পনা থেকে চোখ ফেরাতে হয়। তাকে তাকাতে হবে পায়ের নিচের মাটির দিকে। কারণ পায়ের নিচের কঠিন মাটি ভেঙে ভেঙেই ব্যক্তিকে এগোতে হয়, তেমনিভাবে সমাজকে এগিয়ে যেতে হয় সামনের দিকে।

শিল্প-সাহিত্যের পথ দেখিয়ে দিয়েই সাহিত্যিকের কাজ শেষ হয়ে যায় না; ব্যক্তি ও ব্যবহারিক জীবনে এর চর্চা অতীব জরুরি। সার্থক শিল্পকর্মের জন্য এটি একান্তভাবে কাম্য।

সময়ের তালে তালে সাহিত্যের ভূমিকা পাল্টে যেতে বাধ্য। সাহিত্য যদি মানুষের চরিত্রের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব রাখতে না পারে, তাহলে জীবন সংগ্রামে সাহিত্যের যে গুরুত্ব রয়েছে, তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। কারণ সাহিত্য জীবনের জন্য, জীবন সাহিত্যের জন্য হতে পারে না।

মনিন্দ্র নাথ বাড়ৈ : প্রধান শিক্ষক, রাজৈর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মাদারীপুর


More News Of This Category