• রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

নৌকায় ভোট দিয়ে আবার সেবা করার সুযোগ দিন

একেনিউজ ডেস্ক ॥
Update : বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩

রংপুরে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলে মানুষের উন্নতি হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কাজেই ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও আপনারা আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন, সেটাই আমি আপনাদের কাছে চাই। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে হাত উঁচিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি চাইলে লাখ লাখ মানুষ দুই হাত তুলে এবং স্লোগানে স্লোগানে জনসমাবেশস্থল প্রকম্পিত করে নৌকা মার্কার প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা জানান।

গতকাল বুধবার রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে এলে, নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। উত্তরবঙ্গের মানুষের কষ্ট লাঘবে তিস্তা মহাপরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করবে সরকার। তিনি বলেন, নৌকা মার্কা ক্ষমতায় থাকলে কৃষকের ভাগ্যে পরিবর্তন হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে। অনেকেই তো ক্ষমতায় ছিল, এই রংপুরের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ

করেনি। খালি নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলেই কাজ হয়। আমরা ক্ষমতায় থাকাকালীন রংপুরে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি, আর দেখা দিবেও না। তিনি বলেন, এই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ আরও উন্নত হবে। এখন উন্নয়নশীল দেশ, এরপর হবে উন্নত দেশ। ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। সব ক্ষেত্রে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।

শোকাবহ আগস্ট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মাসে আমি বাবা, মা, ভাই- সব হারিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের জনগণ- এটাই তো আমার সংসার। এটাই আমার আপনজন। আপনাদের মাঝে খুঁজে পাই বাবা-মায়ের স্নেহ। কাজেই প্রয়োজন হলে এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাবার মতো জীবন দিতেও আমি প্রস্তুত। রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি, দেবার কিছু নেই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই। তিনি বলেন, যে বাংলাদেশকে একসময় (দেশের বাইরের) মানুষ করুণা করত, এখন সেই বাংলাদেশকেই উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে চেনে। এই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে হবে।

দেশের মানুষ এখন শান্তিতে ভোট দিতে পারে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে, অনেক আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। মানুষ শান্তিমতো এখন ভোট দিতে পারে। তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। কিন্তু এখানে একটি গোষ্ঠী আছে যারা সব সময় বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলে। জাতির পিতাকে হত্যা করে সেই খেলা শুরু হয়েছিল। বারবার ক্ষমতা দখল, হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে কোনো মঙ্গা হয়নি। ২০০৯ সালে এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই এলাকার মানুষের আর কোনো কষ্ট হয়নি। রংপুর তথা উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের খ-চিত্র তুলে ধরে রংপুরের পুত্রবধূ ও টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরবাসীকে উদ্দেশ করে বলেন, আমি এখানে খালি হাতে আসিনি। আমি কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। আপনাদের উন্নয়ন যাতে ত্বরান্বিত হয়, তার জন্য এগুলো করেছি। বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাসলাইন করছি। আপনাদের দীর্ঘদিনের গ্যাসের দাবি ছিল।

লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, একদিন আমাদের মানুষ চাঁদেও যাবে। প্লেন বানাতে পারবে। সে শিক্ষা সেখানে হবে। ২৭টি প্রকল্প উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এগুলো আমি রংপুর বিভাগের জন্য আমার উপহার হিসেবে দিয়ে গেলাম। একসঙ্গে এতো প্রকল্প এর আগে কোনো সরকার দিতে পারেনি।

রংপুরবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, এখানকার জমি সোনার জমি। ভালো ফসল হয়। সবার কাছে আমার অনুরোধ, আমাদের মাটি আছে। উর্বর মাটি। সোনার ফসল ফলে। আমাদের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যে যা পারেন চাষ করবেন। এ সময় রংপুরে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে রংপুর সুগারমিল চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন। ভবিষ্যতে রংপুর বিভাগের জন্য একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করারও প্রতিশ্রুতি দেন। রংপুর বিভাগসহ প্রত্যেক বিভাগের জন্য আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই দেশের প্রতিটি অঞ্চলে যেন সমভাবে উন্নতি হয়।

করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। উন্নত বিশ্বও হিমশিম খাচ্ছে। সব কিছুর দাম বেড়েছে। এ অবস্থায়ও আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছি। আওয়ামী লীগ আসে মানুষের উন্নতি করতে। এই এলাকার আরও উন্নয়নের জন্য কিছু প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম।

তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের মামলায় শাস্তির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দুর্নীতির মামলা। এই মামলা তো আমরা করিনি। তাদের প্রিয় ইয়েস উদ্দিন (ইয়াজউদ্দিন)-ফখরুদ্দিনরা করেছে। সে মামলায় তারা শাস্তি পেয়েছে। তারা দেশ ধ্বংস করে। আমরা সৃষ্টি করি। প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ করে বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজকে দারিদ্র্যবিমোচন হয়েছে। হতদরিদ্র মাত্র ৫ শতাংশ। এটাও থাকবে না।

মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে তার বক্তব্যে শুনতে থাকা লাখ লাখ মানুষকে উদ্দেশ্যে করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এই মাঠ ছোট বলে অনেকে দূরে বসে আমার কথা শুনছেন। আপনাদের চোখের দেখা দেখতে পাচ্ছি না। তবে আপনারা আছেন আমার হৃদয়ে। হৃদয় দিয়ে আপনাদের ভালোবাসা উপলব্ধি করি। দোয়া করবেন, আমি যেন দেশের মানুষের কল্যাণ করতে পারি, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে জনসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজপথে খেলা হবে। রাজপথেই ফয়সালা হবে। ডিসেম্বরে ফাইনাল খেলা।

রংপুরের জনগণ বিএনপিকে মফিজ বানিয়ে দিয়েছেন এমন কথা উল্লেখ করে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে বিএনপি নেতারা রংপুরবাসীকে মফিজ বলত, আজ এই এলাকার অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এখন রংপুরের জনগণ বিএনপিকে মফিজ বানিয়েছে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমরা এখন আর মফিজ নই। বাসের ছাদে উঠে ঢাকা যাই না। আমরা এখন টিকিট কেটে বিমানে বসে ঢাকায় যাই। বিএনপি আমলে আমরা মঙ্গাপীড়িত ছিলাম। শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের মঙ্গা জাদুঘরে পাঠিয়েছেন।

জনসভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হেলাল উদ্দিন, প্রেডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, শাজাহান খান, খায়রুজ্জামান লিটন, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম। বক্তৃতা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মন্সী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দলের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দলের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা গিনি, কেন্দ্রীয় সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াসহ আরও অনেকে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উপস্থিত ছিলেন।

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এবং মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুলের সঞ্চালনায় আরও বক্তৃতা দেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দীন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ স্থানীয় নেতারা।

এর আগে দুপুর ১২টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্যদিয়ে বিভাগীয় জনসভা শুরু হয়। জাতীয় সংগীত শেষে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও গীতাপাঠ করা হয়। এরপর রংপুর বিভাগের আট জেলা থেকে আসা নেতারা পর্যায়ক্রমে বক্তব্য দেন। বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সমাবেশস্থলে আসেন। প্রথমে সুইচ টিপে ২৭টি বাস্তবায়িত প্রকল্পের উদ্বাধন করেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে এরই মধ্যে পুরো রংপুরজুড়ে ছিল সাজ সাজ রব। সকাল থেকে বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে দলের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন। এতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো রংপুর মহানগরী। জনসভা শুরুর আগেই নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে মাঠ উপচে পড়ে। মাঠের ভেতরের পাশাপাশি হাজার হাজার নেতাকর্মী রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন। জনসভা ঘিরে তৈরি হয় জনস্রোত। নানা রঙের পোশাক আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে গান গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন জনসভায় আসা লোকজন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে জনসভায় হিজড়া জনগোষ্ঠী : আনন্দ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় অংশ নেন রংপুরের হিজড়া জনগোষ্ঠী। সশরীরে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে আসেন তারা। ন্যায় অধিকার-ট্রান্স জেন্ডার উন্নয়ন সংস্থা রংপুর বিভাগের ব্যানারে ‘রাষ্ট্র-সমাজ-পরিবারে, সমান হবো অধিকারে’, ‘প্রধানমন্ত্রীর আগমন রংপুরে স্বাগতম’ লেখা প্লাকার্ড নিয়ে তারা মিছিল করতে করতে জনসভায় উপস্থিত হন। হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটাধিকার ও তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য তারা অনেক বেশি আনন্দিত এবং গর্বিত। সেই কৃতজ্ঞতা থেকে তারা নিজেদের অর্থায়নে, নিজেদের উদ্যোগে এই জনসমাবেশে উপস্থিত হন বলে জানান।

এছাড়াও বীরমুক্তিযোদ্ধা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ সমাবেশে উপস্থিত হন।


More News Of This Category