ছবি সংগৃহীত
বছর দশেক আগে বায়ুদূষণের কারণে প্রায়ই হলুদ-ধূসর ধোঁয়াশায় ছেয়ে থাকতো চীনের রাজধানী বেইজিং। ধোঁয়াশার ঘনত্ব এত বেশি থাকতো যে, আশপাশের কিছুই স্পষ্ট দেখা যেতো না। মানুষজন দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকতো, বাইরে বের হলে মাস্ক ছিল অত্যাবশ্যক। এই অবস্থা বেইজিংয়ের ‘বায়ু-বিপর্যয়’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল বিশ্বজুড়ে।
বায়ুদূষণের কারণে চীনা রাজধানীর কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় শেষপর্যন্ত কয়েকশ কোটি ডলারের একটি কর্মসূচি হাতে নেন দেশটির নেতারা। এর নাম দেওয়া হয় ‘দূষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’।
এক দশক পরে আজ তার সুফল পাচ্ছে চীনের জনগণ। ২০১৩ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশটিতে দূষণের মাত্রা কমে গেছে প্রায় ৪২ শতাংশ। গত মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) প্রকাশিত এক নতুন প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের বার্ষিক এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স অনুসারে, দূষণ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে চীন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী দূষণের মাত্রা যতটুকু কমেছে, তা হয়েছে পুরোপুরি চীনের অগ্রগতির কারণে। চীনের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বিশ্বের গড় দূষণ আরও বেড়ে যেতো।
দূষণ নিয়ন্ত্রণে এই সাফল্যের কারণে চীনা নাগরিকদের গড় আয়ু ২ দশমিক ২ বছর বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
এশিয়ার অন্যান্য অংশে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় যখন বায়ুদূষণ ক্রমাগত বাড়ছে, তখন চীনের এমন সাফল্য অবাক করেছে সবাইকে।
এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের এ প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়াকে ‘বৈশ্বিক দূষণের কেন্দ্রবিন্দু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ অঞ্চলের বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল- বৈশ্বিক দূষণের প্রায় এক-চতুর্থাংশই ঘটে এই চারটি দেশে। কেবল দূষণের কারণে এই দেশগুলোর মানুষের গড় আয়ু কমছে অন্তত পাঁচ বছর করে।
এর মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমছে ৬ বছর ৮ মাস। সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের গড় আয়ু কমছে ৩ বছর ৬ মাস করে।
তবে চীনের সাফল্য দেখিয়ে দিয়েছে- চাইলেই পরিবর্তন সম্ভব। তবে তার জন্য সরকার এবং জনগণকে অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, চীনা সরকার ২০১৪ সাল থেকে প্রধান শহরগুলোর রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা সীমিত করেছে, সবচেয়ে দূষিত এলাকাগুলোতে নতুন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিষিদ্ধ করেছে, পুরোনো কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিয়েছে অথবা কার্বন নিঃসরণ কমিয়েছে, লোহা ও ইস্পাত উৎপাদনের মতো উচ্চ-দূষণকারী শিল্প কার্যকলাপের লাগাম টেনে ধরেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব পদক্ষেপের ভিত্তি ছিল খুবই সাধারণ- রাজনৈতিক ইচ্ছা এবং সম্পদ (মানবিক এবং আর্থিক উভয়ই)। এটি একে অপরকে শক্তিশালী করেছে। যখন সাধারণ মানুষ এবং নীতিনির্ধারকদের হাতে এই উপাদানগুলো থাকে, তখন সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
সূত্র: সিএনএন