গাজীপুরে সাংবাদিক মঞ্জুর হোসেন মিলনের জানাজা।
গাজীপুরে সাইড না দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাক-বিতণ্ডার জেরে বালুবাহী ট্রাকের চাকায় পিষে সাংবাদিক শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলনকে হত্যার ঘটনার প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর আজ শনিবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত দাখিলকৃত অভিযোগ থানায় এন্ট্রি করেনি পুলিশ। ওই ঘটনায় ট্রাকের চালক ও মালিকসহ কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে দুদফা জানাজা শেষে শুক্রবার (৪ আগস্ট) রাতে সাংবাদিক মিলনকে কাপাসিয়ার পাবুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে গাজীপুর জেলা শহর জয়দেবপুরের বাসা থেকে মোটরসাইকেলে করে পেশাগত কাজে ভাকোয়াদি-কাপাসিয়া আঞ্চলিক সড়ক পথে কাপাসিয়া যাচ্ছিলেন সাংবাদিক শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলন। পথে কোটবাজালিয়া বাজারের পাশে পৌঁছালে অপ্রশস্ত ওই সড়ক দিয়ে বিপরীত দিক থেকে বেপরোয়াগতিতে আসা বালু ভর্তি একটি ট্রাক মোটরসাইকেলকে সাইড না দিয়ে ওভারটেক করার সময় সাংবাদিক মিলন আত্মরক্ষার্থে সড়কের বাইরে কাদায় চলে যান। পরে তিনি মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে রেখে ট্রাক চালকের সঙ্গে কথা বলার জন্য এগিয়ে যান। তিনি ট্রাকটিকে থামিয়ে চালকের সঙ্গে কথা বলার সময় দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ট্রাকচালক ক্ষিপ্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিক মিলনের ওপর ট্রাকটি উঠিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। ঘটনার পর ট্রাকটি ফেলে চালক পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার ও ট্রাকটি জব্দ করে।
নিহতের অসুস্থ স্ত্রী রিমিন আক্তার ও ভাই শেখ কামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘এটা পরিকল্পিত হত্যা। সাংবাদিক মঞ্জুর হোসেন মিলনকে ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাকচাপা দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় অবৈধ বালু ব্যবসায়ীসহ একটি প্রভাবশালী মহল বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’
তাঁরা আরও জানান, এ ব্যাপারে ঘটনার রাতেই নিহতের ভাই শেখ কামাল হোসেন বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু ঘটনার প্রায় ৩০ ঘণ্টা পরও শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তা এন্ট্রি হয়নি। এমনকি কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশ বলছে দাখিলকৃত অভিযোগ পাল্টে হত্যার বিষয়টি বাদ দিয়ে পুনরায় জমা দিতে। অথচ ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানিয়েছে, ট্রাকটি সাইড না দেওয়ায় সাংবাদিক মঞ্জুর হোসেন মিলন ট্রাকটিকে সিগন্যাল দিয়ে থামান। পরে তিনি এগিয়ে গেলে ট্রাক থেকে চালকও নেমে আসে। এ সময় সাইড দেওয়া না দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের দুইজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ট্রাকচালক উত্তেজিত হয়ে ট্রাকে উঠে স্টার্ট দিয়ে মুহূর্তেই ওই ট্রাকের চাকায় পিষে সাংবাদিক মিলনকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনা কোন দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি সুস্পষ্ট হত্যাকাণ্ড।
এ ব্যাপারে কাপাসিয়া থানার ওসি এএইচএম লুৎফর কবীর ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দাখিলের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘শনিবার বিকেল পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ জমা দেওয়া হয়নি। ঘাতক ট্রাকটিকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা গেলেও চালক ঘটনার পরপরই পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় গাড়িচালক এবং মালিককে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে শুক্রবার বিকেলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতাল সংলগ্ন মাঠে সাংবাদিক শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে রাতে কাপাসিয়ার পাবুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে ওই গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়।
নিহত সাংবাদিক শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলন (৫২) কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর গ্রামের মৃত আব্দুস সাঈদ শেখের ছেলে। তিনি দৈনিক করতোয়া ও দৈনিক ভোরের দর্পণ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি এবং সাপ্তাহিক গাজীপুর দর্পণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি বৈশাখী টেলিভিশন, দৈনিক যুগান্তর ও দৈনিক দিনকালে কাজ করেছেন। তিনি কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের তিনবারের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া গাজীপুর সিটি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। সাংবাদিক মিলন মৃত্যুকালে অসুস্থ স্ত্রী, দুই কন্যা, মা, ভাই-বোনসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।